ধারাবাহিক উপন্যাসঃ নাইয়র (পর্ব-সাত)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:৩২:৪৯ বিকাল
ফজরের নামাজ পড়ে সকল মুসল্লীরা বের হয়ে গেছে। দু'একজন ভিতরে রয়েছে। তারাও বের হয়ে যাবে এখুনি। একজন সুরা ইয়াসিন পাঠ করছে। অন্যজন বারান্দায় তাসবিহ টিপছে। হাবিব মুন্সী মন দিয়ে তেলায়াত শুনছেন। এই সুরাটি তাঁর মুখস্ত। তারপরও অন্যের তেলাওয়াত শোনাটা ওয়াজিব। আর নিজে তেলাওয়াত করা নফল ইবাদত। ওয়াজিব নফলের থেকে বড় বিধায়-ই বসে বসে শুনছেন।
খালের পাশেই এই মসজিদ।জানালা দিয়ে খালের অপর পাড়ের জীবনযাত্রাও চোখে পড়ে। কিন্তু চোখে পড়াটা ঠিক না। ওপাড়ে হিন্দু বসতি। পুরুষ মহিলারা একসাথে যার যার বাড়ীর খালের অংশে তাল কিংবা খেজুর গাছ দিয়ে বানানো ঘাটলায় নেমে গোসল করে। মহিলারা খালের সাথের রাস্তা দিয়ে যার যার গন্তব্যে চলে যায়। এখন মসজিদে বসে যদি চোখে এগুলো পড়ে, কেমন ব্যাপার হবে সেটা? মনে মনে ভাবেন হাবিব মুন্সী, এই জানালাটা বন্ধ করে দিতে হবে। অপর পাশে নতুন আর একটা বানিয়ে নিলেই হবে। চিন্তায় এতোটা মশগুল ছিলেন যে, তেলাওয়াতকারী মুসল্লি দাউদ শেখ কখন বের হয়ে গেছে টেরও পেলেন না। মনে মনে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়লেন। কোরআন তেলাওয়াতের সময় মনে অন্য কোনো ভাবনা আসাও গুনাহ। আরো করেকবার এই গুনাহ'র জন্য খোদার কাছে মাফ চেয়ে নিয়ে বাইরে বের হলেন।
সকাল বেলাটা আল্লাহপাক মনে হয় খাস করে তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্যই বানিয়েছেন। খালের পাড় দিয়ে হেঁটে চলার সময়ে বিশুদ্ধ বাতাস, শরীর-মন দুই-ই জুড়িয়ে দিচ্ছে। বাতাসের সাথে ভেজা ভেজা এক ভাব রয়েছে। এজন্য আরো আনন্দ লাগছে। সেই ভেজা অনুভুতি চোখের পাতায়, কপালে আর শরীরের উন্মুক্ত যায়গাগুলোতে কেমন এক মায়াবী শিহরণ জাগিয়ে তুলছে। নিজের অজান্তেই একবার 'সুবহানাল্লাহ' বলে ফেললেন।
দু'পাশে ধানি জমি। এখন খালি পড়ে আছে। কিছুদিন পরেই আবার এগুলো সবুজে ভরে যাবে। সেই সবুজের ভিতরে বাতাসের ঢেউ খেলানো দৃশ্য! যে কারো মনকে ভাবুক করে দিতে পারে। তার মতো হাবিব মুন্সীর মনকেও। একটু চমকে যান। এটা কি চিন্তা করলেন? 'তার মতো' দিয়ে নিজেকে কি অর্বাচীন বা নীচু মানুষ বোঝালেন?
একটা মুদি দোকানের সামনে দুটো কাঠের বেঞ্চ। সাধারণ দা দিয়ে বেশ অযত্নে বানানো হয়েছে বোঝাই যায়। সেখানে বসলেন। পিছনে একটি বাঁশঝাড়। সবুজ কচিপাতার আড়াল থেকে উদীয়মান সুর্যের প্রথম আলোক রশ্মি তার পিঠে পড়ছে। সাদা পাঞ্জাবী কমলা লাল রঙে চকচক করে উঠলো। তিনি ভোরের সুর্যোদয়ের এই দৃশ্য বেশ মন ভরে উপভোগ করছেন। অবাক হয়ে ভাবেন, প্রতিদিনই তো ফজরের নামাজ মসজিদে আদায় করেন। কিন্তু আজকের মত কোনো দিনই তো সুর্যোদয়ের দৃশ্য তাঁকে এমন ভাবুক করেনি! এক লোক ডোঙ্গা নৌকা নিয়ে কালি গঙ্গায় মাছ ধরতে যাচ্ছে। নৌকায় বসে সে তার জাল আর বড়শি গুছিয়ে নিচ্ছে। ওপাড় থেকে কালু ওর গরুগুলোকে গোসল করাতে খালে নামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পানিতে সেগুলো নামতেই চাইছে না। এক ঝাঁক পাখী মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো। সেগুলোর শব্দে তিনি উপরের দিকে তাকালেন। একটা নির্দিষ্ট ছন্দে ও প্যাটার্নে পাখির ঝাঁকটি উড়ে চলেছে। কখনো তীরের আকৃতি নিচ্ছে... কখনো অর্ধচন্দ্রের।
কত কথা মনে পড়ছে আজ। ছেলেবেলায় তার বাবা জোর করে তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিলেন। কিন্তু তিনি নিজে চেয়েছিলেন স্কুলে পড়তে । তখন অবশ্য এখনকার মতো স্কুল ছিল না। বলতো টোল। আর মাষ্টার ছিলেন হরিহরন চক্রবর্তী। সবাই ডাকতো পন্ডিতমশাই। গল্পে এখন যেভাবে তাদেরকে তুলে ধরা হয় , আসলেই ওনারা সেরকম ছিলেন না। ছাত্রদেরকে অনেক যত্ন করে হাতেখড়ি দিতেন। সেই হাতেখড়ির অনুষ্ঠানগুলোও ছিল খুব জাকজমকপূর্ণ। যার হাতেখড়ি দেয়া হতো, সে তার আত্মীয়স্বজন পরিবেষ্টিত হয়ে নতুন জামা-প্যান্টে আচ্ছাদিত হয়ে দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করতো।চিকন বাঁশের কলম, সাথে কয়লা গুড়ো করে বানানো কালির দোয়াত এবং চিকন তালপাতার খাতা। আর লেখা মুছবার জন্য এক টুকরো রুমাল জাতীয় কাপড়। বাতাসা, খই, মুড়ি, গুড় সবার মাঝে বিলানো হতো। এজন্য শিশু সমাজে এই 'হাতেখড়ি'র অনুষ্ঠানগুলোর বেশ কদর ছিল।
হাবিব মুন্সীকে পিরোজপুর সদরে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়ে আসলেন তার বাবা হাফেজ জয়নাল মুন্সী। একটা টিনের ট্রাঙ্কের ভিতরে সব কিছু নিয়ে একদম অপরিচিত নতুন এক পরিবেশে বাবা তাকে রেখে চলে এলেন। বড় হুজুর এর সাথে বাবা কিছু একটা বলে ওকে বেশ বড় এক রুমে নিয়ে অন্য একজন 'ওস্তাদজীর' হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেই 'ওস্তাদজী' যিনি ছোট হুজুর নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন, প্রসন্ন হাসি দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। তবে তাঁর এই হাসির ভিতরে যে কতটা নিষ্ঠুরতা লুকিয়ে ছিল, সেটা ধীরে ধীরে তিনি বুঝেছিলেন। মাদ্রাসার পড়ালেখা যে কতটা কষ্টকর ছিল সেই যুগে, এখনকার ছাত্ররা তা মো্টেও অনুভব করতে পারবে না। বেতের চল অবশ্য এ যুগেও রয়েছে। কিন্তু ছোট হুজুর ওদেরকে আক্ষরিক অর্থেই চামড়াহীন বানিয়ে ছেড়েছিলেন।
নিজের গ্রামের মাটির সোঁদা-গন্ধময় পরিবেশ ছেড়ে কতগুলো বছর তাঁকে সেই গুমোট পরিবেশে কাঁটাতে হয়েছিল। অবশ্য শিক্ষা পেয়েছিলেন পর্যাপ্ত। তবে শিক্ষিত হতে পেরেছিলেন কিনা কখনো নিজেকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। আজ পারুল-মোতাহার-মুজিবরেরা যে নতুন উদ্যমে গ্রামের এতোদিনের লালিত আচার-কৃষ্টিকে ভেঙ্গে ফেলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা চালাচ্ছে- সেটা যে ঠিক একথা মনে মনে তিনি অনুভব করেন। তার ভিতরে এক ফ্রাংকেনস্টাইন বাস করছে... কিংবা একজন মিঃ হাইড। বাবা যদি তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি না করাতেন তবে আজ হয়তো তিনিও পারুলদের সাথে একত্রে থাকতেন।
নিজের মাকে প্রসব বেদনায় ভয়ানক কষ্ট পেতে দেখেছেন। বাবা তাবিজ-পানি পড়া আর দাই এর উপরে নির্ভর করে রইলেন। মুখে বললেন, 'তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ'। চাচারা বলেছিলেন পিরোজপুর সদরে নিয়ে যান। শোনেননি। আর মৃত এক ভাইকে প্রসব করে মা-ও একেবারে চলে গেলেন। মায়ের যন্ত্রনাক্লিষ্ট মৃত মুখের সেই দৃশ্য আজও তার চেতনাকে নাড়া দিয়ে যায়।আর একটা অক্ষম ক্রোধ নিজের বাবার ওপর থেকে শুরু করে গ্রামের এই সিস্টেমটি যারা বানিয়েছিলেন তাদের সকলের ওপর গিয়ে পড়ে। সেই বয়সেই তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, মায়ের এই মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের সকলকে একদিন তিনি নিজের মত করে দেখে নেবেন। বাবা ছিলেন মূল আসামী। কিন্তু তিনি নিজের মতো করে দেখবার মতো বড় হবার আগেই বাবাও মায়ের কাছে চলে গেলেন। এই কষ্টটাও হাবিব মুন্সীকে মনের ভিতরে প্রচন্ড এক মানসিক যাতনায় ফেলে দিলো। নিজের অজান্তেই তিনি একজন মানসিক রোগীতে পরিণত হলেন। তবে এমন একজন রোগী যিনি সব কিছু বোঝেন, জানেন এবং শোনেন। কিন্তু চলেন সম্পুর্ণ উল্টা পথে। সেই পথ তার নিজের তৈরী করা।
নিজে স্কুলে পড়তে পারেননি... তাই স্কুলকে দেখতে পারেন না। তার মা চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন... গ্রামের অন্যদেরকেও তাই সুচিকিৎসার সুযোগ নিতে দিতে চান না। বাবা চেয়েছিলেন ছেলে একজন ইসলামিক স্কলার হবে... সব জেনে সবকিছু মেনে চলা একজন স্কলার। তিনি অর্ধেক পূরণ করেছেন তার বাবার ইচ্ছা। ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করেছেন যতদূর পারা যায়; কিন্তু নিজে মানলেন না অনেক কিছু। তাই সব জেনে শুনেও ঘোড় দৌড়ের সময়ে টাকা ইনভেস্ট করেন... জুয়ার বোর্ডের ব্যাপারেও তার আপত্তি নেই। সুদে টাকা দেবার সিন্ডিকেটের মূল হোতা তিনিই। মোটকথা গ্রামটির অঘোষিত প্রধান তিনি। সবাইও সেটা জানে এবং প্রকাশ্যে মানেও। কিন্তু তিনিও জানেন এখন যুগ পাল্টেছে। সবাই পরিবর্তন চায়। বেশীদিন আর এদেরকে বশে রাখা যাবেনা। তাইতো যেকোনো উপায়ে আধুনিকতার ছোঁয়া গ্রামে যেন না আসে সেদিকে খুব লক্ষ্য রেখেছিলেন। গ্রামের প্রভাবশালী অন্যদেরকে সাথে নিয়ে একটি বিষবলয় তৈরী করে রেখেছেন।
আজ সকালে এই বেঞ্চে বসে বসে তিনি এতোদিনের হারানো স্মৃতিগুলোকে রোমহ্নন করলেন। নিজের অতীতের ভিতর থেকে তার সেই ভালোমানুষ রুপটি ক্ষণে ক্ষনে তার সামনে উপস্থিত হতে চাইলো। তিনি একটু দ্বিধায় পড়ে গেলেন। এখনও কি ফেরার সময় হয়নি তার? আর কতো এই চক্রের ভিতরে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখা? অনেক তো হলো 'খেলা'। এবার নিজের ভিতরের ভালোমানুষটিকে কেন জাগ্রত করা নয়? নিজের শুভ্র দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে দাঁড়ির কোমলতায় তার হৃদয়ও নরম হয়ে আসতে চায়। পলকে একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিজেদের ভিতরের সাদা-কালোর যুদ্ধে মেতে উঠে। হাবিব মুন্সীর অন্তরের একটি অজানা অধ্যায় চিরপরিচিত মানুষটিকে ভ্রুকুঠি করে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। কিন্তু বাকি সত্ত্বা ঐ অধ্যায়টির বিরোধিতা এতটা প্রচন্ড ভাবে করে যে, খোদ হাবিব মুন্সী নিজেই হেলে যায়। হয়তো তিনি সেই অধ্যায়টির প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে পড়তেন।
যদি না ঠিক তখনি দূর থেকে পারুল আর মুজিবরকে খালি পায়ে এদিকে হেঁটে আসতে দেখতেন।
আর তখনি নিজের ভিতরে কিছু একটা ওলট পালট হয়ে যায়। বিগত দিনগুলোতে এই মেয়েটির কাছে সব বিষয়ে তার হারের কথা তাকে এই মুহুর্তে মনে করিয়ে দেয়...এক নরপশু কোথা থেকে যেন তার ভিতরের শুভবুদ্ধিকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়... সেই অজানা অধ্যায়ের পেছনের মানুষটি ব্যথিত হয় এই চিরচেনা মানুষটির ভয়ংকর রূপ দেখে। নিজের আলো নিয়ে সে ফিরে যায় অন্ধকারে। কারণ তার হাতের আলোটুকু পর্যাপ্ত নয়।
তাই হাবিব মুন্সীদের মত মানুষদের নিজেদের ভেতর থেকে কখনোই ফেরা হয়ে উঠে না। তারা শুধু ক্ষণিক জ্বলে উঠেই আবার মিইয়ে যান। যেভাবে আজ জ্বলে উঠেছিলেন। প্রকৃতির হিসাব নিকাশ কি আমাদের মনের মতো করেই হবে? শুভ কিছু একটা ঘটানোর জন্য অশুভ চক্রেরও যে দরকার আছে। হাবিব মুন্সীদেরকে প্রকৃতি সেই চক্রের ভেতর থেকে এজন্যই হয়তো বের হতে দেয় না।
... ... ...
শ্রীরামকাঠী গ্রামের জীবনযাত্রায় কিছুটা বৈচিত্র্য এসেছে। ঘোড় দৌড় শেষ হয়ে আন্তঃইউনিয়ন ফুটবল টুর্নামেন্টও শেষ হল। ভালোয় ভালোয়ই শেষ হয়েছে। ফাইনালে গিয়ে হেরে গেলো শ্রীরামকাঠী একাদশ কেওড়াবুনিয়া একাদশের কাছে। ফাইনালে এক পর্যায়ে মারামারি হতে গিয়েও হলো না। কঠিন হাতে নিয়ন্ত্রণ করেছে আয়োজক কমিটি।
কীভাবে যে সময় চলে যায়! আবার আষাঢ় মাস এসে গেছে। গত বর্ষার সময়ে মানুষের কষ্ট দেখে চেয়ারম্যান মোতাহার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিল রাস্তার সংস্কারের ব্যাপারে। সে সেটা করেও দেখিয়েছে। যত বৃষ্টিই হোক না কেন, এখন আর হাঁটু পর্যন্ত কাপড় তুলে কাউকে চলাফেরা করতে হবে না। রাস্তার স্লোপ দু'পাশে করে দেয়াতে পানি রাস্তায় জমতে পারে না। খালের দিকের অংশ দিয়ে তো সরাসরি পানি খালে পড়ে যায়। বিপরীত দিকের পানির জন্য ড্রেনের ব্যবস্থা করে রাস্তার নীচ দিয়ে খালের সাথে ঢালাই পাইপের দ্বারা সংযোগ দেয়া হয়েছে। সবার মুখে মুখে মোতাহারের এই কাজের প্রশংসা। তবে প্রশংসার জন্য যতটা না সে করেছে, নিজের হৃদয়ের চাহিদা মিটাতে- মনের খোরাক মেটাতেই বেশী করেছে।
পারুলের জীবনও খুব ব্যস্ত কেটে যাচ্ছে। কবি মুজিবরকে সাথে নিয়ে স্কুল চালানোর পাশাপাশি গ্রামের টুকটাক বিভিন্ন সমস্যা খুঁজে বের করে সেগুলো মোতাহারের সামনে তুলে ধরছে। কখনো নিজে উপযাজক হয়ে সমাধানের পথও দেখিয়ে দিচ্ছে। এর দ্বারা সাধারণ মানুষের উপকার হলেও দুষ্ট চক্রের কাছে ওরা তিনজন ধীরে ধীরে অসহ্য হয়ে উঠছে। ওদের সাথে ঐ চক্রের সম্পর্কটা ধীরে ধীরে আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।
আর এই সম্পর্কটিকে বিস্ফোরনোম্মুখ পর্যায়ে নিয়ে যেতেই যেন বাজারে কৃষি ব্যাংকের শাখাটি স্থায়ীভাবে চলে এলো। পারুল-মোতাহার-মুজিবর যেমন খুশী হল, না বুঝেই হাবিব মুন্সী গং বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালো। তবে ব্যাংকের এখানে আনার আসল উদ্দেশ্য যদি ওরা জানত, তবে নিজেদের সর্ব শক্তি দিয়ে হলেও তা প্রতিহত করতে চেষ্টা করত। পারুল এবং মোতাহার এই বিষয়টি নিয়ে ধীরে ধীরে আগাতে চাইলো। ওরা যদি একবারেই যারা যারা সুদে টাকা নিয়েছে তাঁদের সবাইকে একত্রে কোব্বাত আর মালেক শিকদারের ক্ষপ্পর থেকে বের করে আনার চেষ্টা করে, তবে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাবে। এজন্য একজন-দু'জন করে এই চক্র থেকে বের করে আনতে হবে। যাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে ভর্তি হয়েছে তাদেরকে আগে বের করার সিদ্ধান্ত নিলো ওরা।
আরো দু'টি ঘটনা এলাকার মানুষের ভিতরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।
উত্তর পাড়ার আব্দুল হালিমের মেয়ে সালমা বেগম। একই গ্রামের বাসেত আলীর সাথে বিয়ে হয়েছে। বেশ সুখেই দিন কেটে যাচ্ছিলো। বাসেত নিজের জমিতে চাষাবাদের পাশাপাশি টুকটাক অনেক কাজ জানে। কাঠের কাজ, রাজমিস্ত্রীর কাজ- এ দুটো সে অনেক ভালো পারে। কিন্তু নিজের গ্রামে কেন জানি ওর এই কাজ করতে ইছে করে না। তাই দূরের গ্রামগুলো থেকে ডাক এলে সে কয়েকদিনের জন্য চলে যায়। বাড়িতে বউ আর ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া ছেলেকে রেখে মোটামুটি নিশ্চিন্ত থাকে। আর সালমার মা-বাবা তো রয়েছেনই খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য।
সেদিন সালমা গরুকে খাওয়ানোর জন্য বাড়ির পাশের ক্ষেত থেকে পাট গাছের পাতা কেটে নেয়। এটা দেখে পাটগাছ চুরির ঘটনায় ক্ষেতের মালিক সাদেক আলী হাবিব মুন্সীর কাছে নালিশ জানায়। হাবিব মুন্সী এবং মালেক শিকদার সুষ্ঠু বিচার করবার আশ্বাস দেয়। কিন্তু নির্ধারিত দিনের আগের রাতে হাবিব মুন্সীর বেয়াই মারা যাওয়াতে ঐ রাতেই মালেক শিকদারকে নিয়ে সে চানকাঠীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। যাবার আগে কোব্বাত মিয়া আর সিনিয়র টিচার সাহাবুদ্দীনকে সালিসের দায়িত্ব দিয়ে যায়।
গত শুক্রবার হাবিব মুন্সীর বাড়িতে সালিস বসে। এতে অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী- উভয় পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিল। সেই সময় সালমার স্বামী বাসেত আলী চুক্তিতে কাজ করার জন্য বানারিপাড়া ছিল। আর এতো সামান্য একটি ঘটনা নিয়ে সালিসের প্রয়োজও ছিল না। পারুল-মোতাহার-মুজিবর কিছুই জানতে পারলো না। অভিযুক্তদের পক্ষ থেকেও তাদেরকে কেউ কিছু জানালো না। এই সালিসে কোব্বাত মিয়া, সাহাবুদ্দীন বি,এস,সি ছাড়াও দুষ্ট চক্রের পক্ষের মানুষেরাও ছিল। সালিসে পাটগাছ চুরির অভিযোগে সালমাকে সকলের সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে সালিসকারীরা। এরপর দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নিজের ছেলের সামনে সালমা বেগম এভাবে অপমানিত হয়ে সহ্য করতে পারে না। বাড়ী ফিরে সন্ধ্যায় বাড়িতে রাখা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। ঐ রাতেই বাসেত আলী বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে মৃত অবস্থায় পায়। সব ঘটনা শুনে সে পুলিশে খবর দেয়।
মোতাহার ও পারুল মুজিবরকে সাথে নিয়ে বাসেতের বাড়ী আসে। মোতাহার তাঁকে না জানানোর জন্য একাধারে প্রচন্ড ক্রদ্ধ ও ব্যথিত হয়। সালমার বাবাকে অনেক রাগারাগি করে। পারুলের অনেক মন খারাপ হয়। সালমা ওর ছেলেবেলার খেলার সাথী... ওর সই ছিলো। পুলিশ এসে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য উপজেলায় নিয়ে যায়। আর একটি অপমৃত্যু মামলা করার পরামর্শ দেয়। লোকাল থানাও যে হাবিব মুন্সীর নিয়ন্ত্রনে চলে সে কথা পারুলরা বেশ ভালো করেই জানত। তাই পারুল সালমার স্বামী বাসেতকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনে সকল সালিসকারীর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বলে। বাসেত সেই অনুযায়ী কাজ করে।
পরেরদিন থানা প্রথমে মামলা নিতে গড়িমসি করে। মোতাহারের নেতৃত্বে অনেক মানুষ থানায় ধীরে ধীরে জড়ো হতে থাকলে পরিস্থিতির চাপে পড়ে পুলিশ মামলা নেয়। কোব্বাত মিয়াকে গ্রেফতার করতে পারলেও সাহাবুদ্দীন বি,এস,সি কে ধরতে পারে না। সে খবর পেয়ে আগেই ফেরার হয়ে যায়।
মোতাহার ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে এক জরুরী সভা আহ্বান করে। সেখানে বসে সকল সদস্যদেরকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসে। গ্রামবাসীকে পরের দিন আসরের নামাজের পরে হাইস্কুল মাঠে জমায়েত হবার জন্য অনুরোধ করা হয়। সালমার মৃত্যুতে এমনিতেই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই মুহ্যমান ছিল। আর ওর ব্যাপার নিয়ে আলোচনা সভা ডাকাতে সেদিন পুরো মাঠটি ভরে গেলো। এরপরও মানুষ খালের ওপারে এবং ব্রীজের উপরে দাঁড়িয়ে রইলো।
মোতাহার সালমার করুণ মৃত্যুতে নিজেদের দায়বদ্ধতার কথা স্বীকার করে প্রথমেই সালমার বিদেহী আত্মার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। এরপর ওর সম্মানার্থে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করে। তারপর আবেগমথিত কন্ঠে সালমার করুণ মৃত্যুর জন্য নিজেদের করনীয় কি ছিল সেটা বিস্তারিত বর্ণনা করে। মাইকে মোতাহারের কন্ঠ ভেসে আসতে থাকে, " আমাদের দেশে গ্রামীণ সমাজে এখনো ফতোয়াবাজদের প্রভাব কমেনি। সরকার আইন করে ফতোয়ার মাধ্যমে কাউকে শাস্তি দেয়া দন্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষনা দিলেও, আমাদের নিজেদের অজ্ঞতা আর ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস বা ফ্যানাটিক মেন্টালিটির কারনে নিজেরা এখনো এই সিস্টেম থেকে বের হতে পারছিনা। নিজেও বের হচ্ছি না, অপরকেও বের হতে দিচ্ছি না। সালমা নামের মেয়েটির সামান্য অপরাধের জন্য তাঁকে যেভাবে অপদস্থ করা হল, সেই অধিকার রাষ্ট্র কখনো সমাজের মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে দেয়নি। যখন এই রাষ্ট্র পুরোপুরি ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে, তখনই কেবলমাত্রই ফিকাহ শাস্ত্রে অভিজ্ঞ আলেমদের দ্বারা ফতোয়া জারি এবং কার্যকরকরণ সম্ভব। এর আগে গ্রামের সুবিধাবাদী গন্ডমুর্খ কিছু পিশাচদের এই ফতোয়ার ধারে কাছে যাওয়াটাও তো বিশাল অপরাধ। আর দশ টাকার পাট শাকের জন্য কাউকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করাটাও অযৌক্তিক।"
একটু থামে মোতাহার। পিনপতন নীরবতার ভিতর দিয়ে জমায়েত সকল মানুষের দৃষ্টি ওর নিজের উপর দেখে একটা ঢোক গিলে। নিজেকে শক্ত করে। কারণ এখন সে যা বলতে যাচ্ছে, তাতে ওদের বিরুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ ঘোষণার মতোই হবে। সে আবার বলা শুরু করে, " আমরা এখন থেকে আর নিজেদের ভিতরের সমস্যা সালিস পর্যন্ত নিয়ে যাবো না। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, তবে কি আমরা থানা-পুলিশের কাছে যাবো? না, আমি সেটাও করতে বলবো না। সালিস ঠিকই হবে, তবে সেখানে লোকাল প্রশাসনকে বাদ দিয়ে করা যাবেনা। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এখন থেকে যে কোনো সমস্যার সুরাহা করা হবে। আর প্রতি বাড়ি থেকে এক একজন প্রতিনিধি থাকতে হবে সালিসকারীদের ভিতরে। থানার একজন প্রতিনিধি থাকবেন। প্রয়োজনে বাজারের মাঠে প্রকাশ্যে সালিস বসবে। কিন্তু একতরফা নির্জন কোনো বাড়ির ভিতরে সালিস এর নামে প্রহসন আর চলবে না। সালিসকারীদের ভিতর থেকে প্রকাশ্য ভোটে প্রতিবার একজন রায় ঘোষনাকারী নির্বাচন করা হবে। শিক্ষিত মানুষদেরকে জুরি প্যানেলে রাখতে হবে। আজই এই জমায়েতে আমরা সেই প্যানেল ঠিক করবো। মোট কথা ছোটখাট সমস্যা নিজেরাই মিটাবো। তবে সুষ্ঠুভাবে। আমরা চাইনা আর কোনো সালমাকে আত্মহত্যা করতে হোক। এখন আমার এই প্রস্তাব আপনাদের কেমন লাগলো আমাকে জানান। রাজী থাকলে এক সাথে বলেন। না থাকলেও এখানেই জানান।"
মোতাহার তাঁর কথা শেষ করতেই জমায়েত সকল গ্রামবাসী একসাথে চিৎকার করে জানায় তাঁরা রাজী আছে। এই সহজ সরল মানুষগুলোর কেউ না কেউ ঐ দুষ্টচক্রের ফতোয়া কিংবা সালিস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু তাঁরা এতোটাই অসহায়- আর্থিক এবং সামাজিক প্রতিপত্তির দিক থেকে যে, নিজেরা কখনো এক হয়ে সাহস করে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেনি। তবে ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড উত্তপ্ত এক বারুদে পরিণত হয়েছিল অনেক আগেই। দরকার ছিল শুধু একটি ম্যাচের কাঠির স্ফুলিঙ্গের। সেই কাজটি আজ মোতাহার করে দিলো।
জনতার ভিতরে ঘাপ্টি মারা দুষ্ট চক্রের অন্য সদস্যরা অসহায় হয়ে উত্তাল জনতার নব শপথে বলীয়ান হওয়া আর ওদের ক্ষমতার অন্যতম একটি দূর্গের পতন ঘটছে দেখতে থাকলো। জনতার আক্রোশ যে কি জিনিস সেটা হয়তো আজ কিংবা কাল ওদের চেতনায় ভীতির সঞ্চার করবে। তবে পরশু থেকে আবারও ওরা বেমালুম সব ভুলে যাবে। সেই চিরাচরিত জীবন যাপনের জন্য করনীয় সব কিছুই করতে চাইবে। এভাবেই চলে আসছে... চলতে থাকবে। তবে এরই মাঝে বিপ্লব বলে একটা কথা রয়েছে। সেটা হলো পরিবর্তন এর ঢেউ। তবে সে জন্য কিছু আত্মত্যাগের প্রয়োজন হয়।
বিনা রক্তপাতে কবে কোন বিপ্লব সাধিত হয়েছে?
শ্রীরামকাঠী গ্রামেও মোতাহার প্রকারান্তরে আজ এক বিপ্লব সাধনের শুরুটাই ঘোষনা করলো। এখন ধীরে ধীরে তার ডালপালাগুলো ছড়ানো বাকি। আর ঐ যে রক্তপাতের কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সেটাও হবে। মোতাহার নিজের ভিতরে ভিতরে এক কঠিন প্রতিজ্ঞা করে। নিজের কাছে। কোমলে কঠোরে আরো কঠোর হবার প্রত্যয়ী হয়।
এই ছিল গ্রামবাসীর জীবনের সাম্প্রতিক ঘটনার একটি।
দ্বিতীয়টি আরো বেশ মজার ছিল।
(ক্রমশঃ)
বিষয়: সাহিত্য
৯৮৭ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুভেচ্ছা আপনার জন্যও।
আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ঘুরে যাবার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ইনশা আল্লাহ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
একটি পরামর্শ দিতে চাই..! আপনার লেখার কারোকাজ ভালো, লেখার সাথে মিলিয়ে আপনি আর কয়েকটি ছবি যোগ করুন, প্রথম ছবিটা উজ্জল হলে ভালহয়।
আমার ছবির স্টক তেমন ছিল না বিধায় এই ছবিটিই বার বার দিয়ে যাচ্ছি। ওকে, আজ নতুন আর একটি দিচ্ছি।
শুভেচ্ছা আপনাদের দুজনকে অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
সুন্দর জিনিস তুলে ধরেছেন।
এক মিনিট নীরবতা পালন এটা এখন একটা ট্রাডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর নীরবতা পালনে সালমার সাথে যে অন্যায়টা করা হয়েছে, তার কিছুটা হলেও দায়বদ্ধতা- কিছু করতে না পারার ব্যর্থতা ঢাকবার চেষ্টা করা আর কি। আর ফতোয়া সালমার মৃত্যুতে উঠে আসেনি। কথা প্রসঙ্গে এসেছে। কারণ হাবিব মুন্সী কোনো মুফতি নন, একজন ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞই কেবল মাত্র ফতোয়া দেবার বিধান রাখেন- এটা আপনি ভালো ভাবেই জানেন। তাই মোতাহারের মুখ দিয়ে এটি বের করা হয়েছে। আর যে ইসলাম বিদ্বেষের কথা বলেছেন, মোটেও তা হচ্ছে না। ইসলামের নামে মানুষকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করছে যে চক্রটি, তাঁদের মুখোশ খুলে দেয়া হচ্ছে। গ্রামীন সমাজটি মুলত; গড়েই উঠছে ইসলামকে কেন্দ্র করেই, তাই সব কিছুতেই তো ইসলাম আসবেই। আমার কথা হল, সুচিকিৎসা না করে, হাবিব মুন্সীর পানি পড়ার বিরুদ্ধে আমি- কারণ সে নিজেই ইসলামের বিধান ১০০% মেনে চলে না, তো তার পানি পড়ায় কাজ হবে না। একজন সহীহ আলেম সুরা ফাতেহা পড়ে ফুঁক দিক, আর ঈমানের সাথে সেই পানি পান করলেই কাজ হবে, নচেৎ নয়।
আর গ্রামীন সমাজে আমার দীর্ঘদিনের বসবাসের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, হাবিব মুন্সীদের মত লোকের কথা আর কাজের সাথে মিল নেই, তাই ইসলামের অপব্যবহার যেখানেই হবে আমার লেখায় সেটিকে অবশ্যই তুলে ধরব; কারণ সঠিক ইসলাম অবশ্যই পালন করতে হবে। না হলে আজ এই ধর্মকে নিয়ে এতগুলি রাজনৈতিক দল এদেশে গড়ে উঠত না; এতগুলো প্ল্যাটফর্মেরও প্রয়োজন হতো না। আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, বলুন, এ দেশে সহীহ ইসলাম প্রচারক দল বা গোষ্ঠী কোনটি? সাধারণ মানুষ কোন প্ল্যাটফর্মে যাবে? চরমোনাইর অধীনে ইসলামিক শাসনতান্ত্রিক আন্দোলন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র সেনা,আটরশির জাকের পার্টি, খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলাম, সায়েদাবাদী হুজুরের দল, দেওয়ানবাগিদের দল এরকম অনেক ইসলামিক দল আছে, এখন বলুন এদের ভিতরে কাকে সাধারণ মানুষ সমর্থন করবে? এতো ভেদাভেদ কেন? এ কি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আলেম সমাজের ভিতরে হাবিব মুন্সীর মত স্বার্থান্বেষী মানুষের অনুপ্রবেশ নয়?
অনেক কথা বলে ফেললাম, হয়তো আমারই বুঝবার ভুল।
ধন্যবাদ আপনাকে জিনিসটি সামনে আনার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন